ভাষ্কর্য ও ইসলামি সংস্কৃতি
ইতিমধ্যে ভাষ্কর্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সারাদেশে এটা নিয়ে বিতর্কের ঝড় বইছে। ইসলামী চিন্তাবিদেরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন।
প্রতিমা বা মূর্তি কি এ ব্যাপারে পবিত্র কোরানে সুস্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে —–
প্রতিমা বা মূর্তি কি —
যখন কোন কিছু স্রষ্টার প্রতিরূপ হিসাবে তৈরি করা হয় আরাধনার উদ্দেশ্যে বা আরাধনা করা হয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে মূর্তি বা প্রতিমা বা প্রতিরূপ বলে। ।যা ইসলামে প্রতিটি মুসলমানের জন্য নিষিদ্ধ।
আরাধনাকারিরা মনে করে সৃষ্টিকর্তা বিভিন্নরূপে পৃথিবীতে আসে। তারা শুধু প্রাণির অবয়ব পুজা করে না, তারা বৃক্ষের, সূর্যের, নদী বা সাগরের এবং আগুনের সহ বিভিন্ন রকম পুজা করে থাকে — যা তারা সৃষ্টিকর্তার প্রতিরূপ মনে করে। সৃষ্টিকর্তার প্রতিরূপ বা সৃষ্টিকর্তা মনে করে কোন কিছুর আরাধনাই পুজা — যা ইসলামে নিষিদ্ধ।
ভাষ্কর্য কি —
কোন ব্যক্তি বা রাষ্ট্র যখন কোন ইতিহাসকে ধারণ বা সংরক্ষণের জন্য কোন কিছুর অবয়ব তৈরি করে প্রদর্শন করে তাকে ভাষ্কর্য বলে। ভাস্কর্যের মাধ্যমে মানুষ ইতিহাসকে জানে এবং প্রজন্মকে জানাতে সাহায্য করে। যা আরাধনা বা সৃষ্টিকর্তার প্রতিরূপ হিসাবে তৈরি করা হয় না।
পবিত্র কোরআনে শব্দের পার্থক্যের মাধ্যমে যা সুস্পষ্ট করা হয়েছে।
প্রতিমা শব্দ বুঝানো হয়েছে –আহসান , আসনাম ও আনসাব দ্বারা
I
ভাস্কর্য শব্দ বুঝানো হয়েছে –তামাসিলা বা তামাসিল দিয়ে।
আমাদের কিছু আলেম অক্সফোর্ড ডিকশিনারির প্রতিমা বা ভাষ্কর্যের সমার্থক শব্দের কথা উল্লেখ করেন কিন্তু কোরানিক শব্দ ও আরবি ডিকশিনারির শব্দের সব অর্থ অক্সফোর্ড ডিকশিনারির শব্দার্থের সাথে যে এক নয় তা কি আলেম সমাজ বুঝেন না। এ ব্যাপারে ইংরেজির প্রাধান্য দিতে উনারা খুব আগ্রহী কেন বুঝি না।
ভাষ্কর্যের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে সূরা সাবা ‘র ১৩ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে —–
” ওরা সুলাইমানের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রাসাদ ভাস্কর্য, পানির হৌজের মত পাত্র ও চুল্লির জন্য বিরাট ডেগ তৈরি করত। (আমি বলেছিলাম) হে দাউদ পরিবার তোমরা কৃতজ্ঞতার সাথে কাজ করতে থাকো। আমার দাসদের মধ্যে অল্পই আছে যারা কৃতজ্ঞ। ”
কিন্তু আমাদের কিছু সম্মানিত আলেম সমাজ পবিত্র কুরআন এর উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যা বা প্রতিমা বা ভাষ্কর্যের কোরআনিক শব্দের পার্থক্য ব্যাখ্যা না দিয়ে শুধু হারাম বলছেন । আল্লাহর কোরআনে ভাস্কর্য তৈরির অনুমোদন দিলেও মুসলমানদের জন্য পুজার অনুমতি দেননি ।
আমার মনে হয় হেফাজতের নিজেদের ব্যর্থতা — গ্রুপিং ও রসুল (দঃ) কে নিয়ে বিতর্ক ঢাকার জন্যই পরিকল্পিতভাবে উক্ত বিতর্ক উসকে দেয়া হয়েছে ।
যদি আলেম সমাজ এ গুলো নিষিদ্ধ করার কথা বলেন তাহলে ছবি উঠানো, ভিডিও বক্তৃতা, মৃত্যুর পর জীবন্ত ভিডিও থাকা– ছবি থাকা কতটুকু ধর্মীয় তা বিতর্ক থেকে যায় । সুবিধা অনুযায়ী ধর্মীয় বিভিন্ন মতভেদের অনুসারীরা বিভিন্ন ভাবে আয়াতের বা হাদিসের যে ব্যাখ্যা দেন তা কতটুকু ইসলামিক তা আলেম সমাজর কাছে প্রশ্ন থেকে যায়? যার ফলে মুসলমানদের মধ্যে এত মতপার্থক্য ও বিভিন্ন দল -উপদল।
রাষ্ট্র সকল ধর্ম -মতের মানুষের একটি চুক্তিভিত্তিক সংগঠন। প্রতিটি রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের ও মতের লোক বসবাস করে । রাষ্ট্র কোন বিশেষ ধর্মের নিয়ম দিয়ে পরিচালনা সম্ভব কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। দেড় হাজার বছর আগের সমাজ ব্যাবস্থা ও বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থার মধ্যে অনেক পার্থক্য বিরাজমান। তখন রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা বলতে কিছু ছিল না । যে কোন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্র দখল করে নিজের মতাদর্শ চাপিয়ে দিতো। এখনকার রাষ্ট্রে এটা এত সহজ কিনা?
তখনকার অর্থনীতি ছিল সীমিত আকারের -বর্তমানে রাষ্ট্রের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও প্রযুক্তিগত আবিষ্কার অনেক জঠিল। পৃথিবীতে কত নতুন কিছু আবিষ্কার হচ্ছে –মানুষকে গ্রহণ করতে হচ্ছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষ ও সমাজকে অনেক দূর নিয়ে যাচ্ছে যা মানুষকে গ্রহণ করতে হচ্ছে । যা গ্রহণ না করলে সমাজ বা রাষ্ট্র পিছিয়ে যাবে। এই গ্রহণ ও বর্জন নিয়ে আলেম সমাজ বিভক্ত হচ্ছেন –একজন আরেকজনকে বিদাতি বা কাফের ফতোয়াও দিচ্ছেন।
বিশাল অর্থনৈতিক কর্মপরিধির কারণে ব্যাংকিং ব্যাবস্থার উৎপত্তি । যার ফলে বিশ্বের উন্নয়ন ও গরীব দেশগুলোর উন্নয়নে অনেক আন্তর্জাতিক ব্যাংক ব্যাবস্থার উৎপত্তি হয়েছে –বিশ্ব উপকৃত হচ্ছে । বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে । এগুলোকে ধর্মের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করলে বিশ্বের বিশাল অংশের মানুষ বা রাষ্ট্র তা মানবে না। এতে বিশ্ববানিজ্য মার খাবে –যে রাষ্ট্র বিশ্ববাণিজ্য থেকে বের হবে সে রাষ্ট্র মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
যার ফলে অনেক মুসলিম মনীষি ইসলামী ব্যাংকিং বলেন –তা কতটুকু ইসলামিক প্রশ্ন সাপেক্ষ?
আমাদের জীবনাচরণে ধর্মে খুব দরকার কিন্তু রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের কর্মকান্ড ধর্ম নিরপেক্ষ না হলে সে রাষ্ট্র ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
পবিত্র কোরআনে জিহাদের কথা যতবার বলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি বলা হয়েছে শান্তির কথা –ধৈর্যের কথা –আমাদের শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজ তা ভালো করেই জানেন। তাই রাষ্ট্রকে সকল ধর্মের ও মতের উর্ধ্বে রাখতে আলেম সমাজকে অনুরোধ করছি।
আমি মনে করি ধর্মকে রাষ্ট্র পর্যায়ে নিয়ে আসলে ধর্ম বিতর্কিত হবে এবং রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে -রাষ্ট্র দূর্বল হবে –অন্য রাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করবে।
তাই অত্যান্ত সহিষ্ণুতার সাথে বিষয়গুলো ভেবে দেখার জন্য শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজকে অনুরোধ করছি।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, কুমিল্লা দঃ জিলা শাখা।
Discussion about this post