”ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ” সম্পর্কে আমার বিক্ষিপ্ত কিছু অনূভুতি:
ছোটবেলা থেকে “পীরসাহেব চরমোনাই” বলতে আমার স্পষ্টত মনে পড়ে সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম রহ. এর কথা। তাঁর ওয়াজ সাধারণ শ্রেনীর মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলতো, কথাগুলো বলতেন একদম দরদ নিয়ে দিলের গভীর থেকে। যদিও খুব বেশী সরাসরি তাঁর বয়ান শুনার সুযোগ আমার হয়নি।
তিনি-ই বর্তমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা। জামায়াতে ইসলামীর একসময়ের অন্যতম অভিবাবক মাওলানা আব্দুর রহীম রহ. ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁর মুক্তি ত্বরান্বিত করুন) তাঁরাও ছিলেন পীরসাহেব চরমোনাই রহ. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এমনকি মাওলানা আব্দুর রহীম রহ. এর জানাযাও পড়িয়েছিলেন সৈয়দ ফজলুল করীম পীরসাহেব চরমোনাই রহ.। সেই ভিডিওটাও আমার আইডিতে পিছনে ঘেটে দেখলে পাবেন। পরবর্তীতে হয়ত আদর্শিক কারনে সাঈদী সাহেব বেরিয়ে এসে জামায়াতে যোগ দান করেন। এ নিয়ে তাঁর কোন বই বা লেখা পড়িনি বলে ইতিহাস আমার জানা নেই।
প্রতিষ্ঠাকালীন দলটির নাম ছিলো ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সংক্ষেপে তারা লিখতো “ইশা আন্দোলন”
মঈন-ফখরুদ্দীনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন করতে গিয়ে সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকতার মুখে “শাসনতন্ত্র” শব্দ বাদ দিয়ে “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ” এ পরিণত হয়। সংক্ষেপে আগে যেহেতু ইশা আন্দোলন তারা নিজেরাই লিখতো এখন “ইআবা” হবে সে হিসাবেই আমি পূর্বের সাময়িক পোষ্টটিতে এভাবে লিখেছি বলে অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন। একজন কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল ভাই জানালেন তারা অফিসিয়াল শর্টকার্ট শব্দ “আই এ বি” ব্যাবহার করেন। সেখান থেকে আমি মাত্র জানলাম বিষয়টি, তাই আমার ব্যবহৃত বাংলা সংক্ষেপকরণ থেকে বাংলিশ সংক্ষেপে কনভার্ট করলাম।
যাক কথা এসবনা, আরো কিছু কথা বলতে চাই:
“ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ” শুধু রাজনীতি করে এমন নয় তাদের মাঝে ব্যাপক আকারে তাসাউফচর্চা তথা ইসলাহে নফসের কার্যক্রম রয়েছে। ইসলাহে নফসের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হলো তাওয়াজু’ আনা আর তাকাব্বুরি দূর করা। মরহুম পীরসাহেব রহ. এর ইখলাস আর চোখের পানির বদৌলতে আল্লাহ্ তা’য়ালা অনেক আওয়ামকে এই নিসবতে জুড়ে দিয়ে বদ্বীনি থেকে দ্বীনের পথে এনেছেন। এটাই যদি এই দলকে বড়ত্ব আর অহঙ্কারের বিষয়ে পরিণত করে তাহলে ইসলাহ্ বিষয়টা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ ও কলঙ্কিত হয়ে যায়।
দাওয়াহ্, তা’লীম, তাবলীগ, ইসলাহী মজলিস,জিহাদ ও রাজনীতি এই সবগুলোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে আমি সমানদৃষ্টিতে দেখি এবং কেউ যদি এক আমল করে অন্য আমলকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে সেটাকে প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করি, আবার একটাকে আরেকটার নামে চালিয়ে দ্বীনের তাহরীফকেও অবশ্যই তীব্রভাবে খন্ডন ও প্রত্যাখ্যান করি এবং করবো ইনশাআল্লাহ্।
মসজিদে মসজিদে সাপ্তাহিক হালকায়ে জিকিরের নামে বৈঠক নিয়ে চরমোনাই-তাবলীগের সংঘাত তো নিজের চোখে অসংখ্য বার দেখেছি। তাদের জিকিরের নির্ধারিত দিনে মসজিদে তাবলীগের বিদেশী মেহমান এলেও নূন্যতম ছাড় দেয়ার মানসিকতা দেখিনি। সব এলাকায় এমন তা হয়ত নয়। কিন্তু চরমোনাই যেহেতু একটা সংঘবদ্ধ দল, তাদের চেইন অব কমান্ড রয়েছে। তাদের এ ধরনের উগ্র আচরণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়।
যারা জিহাদের মেহনত করেন তাদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপমূলক কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেও এই দলটিই অগ্রগামী!
যে সব উলামায়ে কেরাম সিয়াসত করেন তাদের সাথেও আচরণ ঔদ্ধত্যপূর্ণ! সর্বশেষ চলমান বিষয়টিতেই দেখুন।
গতকাল ঘটে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে অনেকে ঐক্য-অনৈক্যের ফোকাস টানছেন! আমি সেই জায়গায় কথা বলিনা কারণ সমমনা ৬ টি দলে সবদল এসেগেছে বিষয়টি এমন নয় এবং জরুরীও নয়।
ইতিপূর্বেও তাঁরা কখনো ৬/৭/৮/১২ ইসলামী দল বিভিন্নভাবে যৌথ কর্মসূচী পালন করেছেন। এর অসংখ্য নজীর রয়েছে। এবারও সেইম তারা করেছেন, অমুককে ডাকলোনা কেন কিংবা অমুকদল আসলোনা কেন তা নিয়ে এখানে প্রশ্ন তোলাটা একদম অনর্থক। কারণ তারা সর্বদলীয় ঐক্য লিখেননি। যে যার যার মত কর্মসূচী পালন করেছে। আমি আমার কয়েকজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে কাজ করবো তাতে আরেকজনকে কেন নেওয়া হলোনা বা নিতে হবে সে জন্য তাঁরা বাধ্য নন।
কথা হলো প্রবীণ অনেক প্রাজ্ঞ ব্যাক্তিত্ব মিলে কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন এবং তারিখ ও স্থান ঘোষণা করেছেন। ঘটনাক্রমে একই জায়গায় চরমোনাই সমর্থকরাও কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। তবে উক্ত ৬ দলের প্রচারণার পূর্বে তাদের নূন্যতম কোন প্রচারণা ই দেখা যায়নি এমনকি তাদের কন্ট্রোলে থাকা কোন পেজ আইডি কিংবা কোন পোর্টালের কোথাও উল্লেখ ছিলোনা যে ১৬ ই অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে তারা সমাবেশ করবে। শুধুমাত্র ৯ তারিখের সমাবেশে তাদের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ঘোষণা করেছে। এটা একেবারেই কোন ধরনের প্রচার- প্রচারণা না হওয়ায় সেদিন সেখানে উপস্থিত তাদের দলীয় লোক ছাড়া কারো জানা থাকার প্রশ্নই উঠেনা।
এমনকি বক্তব্যটির রেকর্ড পর্যন্ত মাত্র একটি অখ্যাত পেজে ধারণ করা ছিলো, ৬ দলের কর্মসূচী ঘোষণার পূর্বে কেউ রি-পোষ্টও করেনি।
যাই হোক পরবর্তীতে ৬ দলের কর্মসূচী ঘোষণা হলো, এবার চরমোনাইয়েরও পোষ্টার আসা শুরু হলো। এতে একটি ব্যাপক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হলো যে, উদ্দেশ্য এক তবুও একই জায়াগায় একই সময় দু’পক্ষের আলাদা সমাবেশ!
যাক তারপরও ডিসি অফিসে উভয় পক্ষের লোকজনের উপস্থিতি ও সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হলো যে, নামাজের পর সেই স্পটে ৬ দলের নেতৃবন্দ সংক্ষেপে কিছু কথা বলে সেখান থেকে কর্মীদের নিয়ে তারা বিজয়নগর চলে যাবেন তারপর চরমোনাই তাদের প্রোগ্রাম করবে। কিন্তু সেটাকে ঠেকাতে তারা কি না করেছে গতকাল? ভাইরাল ছবিতেই ক্লিয়ার যে, তারা আলাদা দলীয় পোষাক পরে স্পটে দখল করে নামাজ আদায়। আর নামাজের পর তো কাউকে সাইড দেয়ার প্রশ্নই আসেনা!
আওয়ামীলীগ-বিএনপি এইসব নোংরামি করলে নূন্যতম মাথা ঘামানোর প্রয়োজনবোধ করতামনা, কিন্তু ইসলামী আদর্শের ফেরিওয়ালারা যখন এসব করে বেড়ায় তখন কথা বলতেই হয়। আমি ৬ দলের কোন দলের রাজনীতি তো করি-ই না এমনকি কোনদিন করার সম্ভাবনাও নাই, আর ৬ দলের মুরুব্বী আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সাহেব হাফি. এর সাথে ব্যাক্তিগতভাবে আমার দূরতম কোন সম্পর্কও নেই।
১৭ বছর আগে তাঁর সাথে একবার মুসাফাহা করেছিলাম মাত্র। জমিয়ত কিংবা বারিধারার বারান্দায়ও আজ পর্যন্ত যাইনি কোনদিন।
বলছিলাম তিনি শ্রদ্ধাভাজন মুরুব্বী হিসাবেও তো তাঁর সাথে তাওয়াযূ প্রদর্শনের ব্যাপারে চরমোনাই হাইকমান্ড থেকে কঠোর নির্দেশনা ও তদারকি জরুরী ছিলো। অথচ তাঁরা নাকি তাসাউফ চর্চা করেন!
কি আজীব তাসাউফের চর্চা! যেখানে তাদের ছাড়া বাকীরা সবাই না হক, একমাত্র তারাই হক।
আল্লাহ্ সকলকে হক চেনা, হক বুঝা এবং হক মানার তাওফীক দান করুন।
𝑼𝒔𝒂𝒎𝒂 𝑴𝒖𝒉𝒂𝒎𝒎𝒂𝒅
Discussion about this post